তৈয়বুর রহমান কিশোর,বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক বৃদ্ধের পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে বাড়িঘর ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগটি উঠেছে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ ও ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়না ইউনিয়নের ময়না-বানিয়াড়ী মৌজার সীমান্ত চরবর্নি বাজার সংলগ্ন বর্নিচর গ্রামে। উচ্ছেদে প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন নিয়ে এ হামলা চালানো হয় বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে।
 ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় আগের দিন গত সোমবার রাতে একটি অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তবে ভাঙচুরের পর মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারী) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন থানা পুলিশ। তবে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির চাচার জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।  
জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নে মধ্যযুগীয় কায়দায় একটি পরিবারকে ভিটেমাটি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার জন্য মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ময়না-বানিয়ারী মৌজার সীমান্তবর্তী চরবর্ণী বাজার সংলগ্ন বর্নিচর গ্রামের বৃদ্ধ হাফিজারের বসতভিটা থেকে তার পরিবারকে উচ্ছেদ করতে একটি ফুল ওয়াল ও একটি আধাপাকা বসত ঘর এবং রান্না ঘরসহ টয়লেট ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া ও আসবাবপত্র ভাঙচুরে অভিযোগ। ওই পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে বলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়।
  ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মো. হাফিজার অভিযোগ করে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে ওই জমি আমাদের ভোগ দখলে। ছয় মাস আগে ঘর তুলে আমরা বসবাস শুরু করি।  যা বেলজানী পূর্বপাড়ার মেতালেব শরীফের সঙ্গে আমাদের ৩৬ শতক জমি যা এসএ দাগ নম্বর-৬৩ এর সাথে ময়না মৌজার এসএ দাগ নম্বর-৮৪ এর ২১ শতাংশ ও একই মৌজার ৫২ দাগের ২৬ শতাংশ জমি এওয়াজ বদল শর্তে ভোগ দখল করে আসছি। জমির মধ্যে ১১শতাংশ গত বিএস রেকর্ডে মোতালেব শরীফের ছেলে অহম ও তহম শরীফ রেকর্ড করে নেয়। রেকর্ড শর্তে এ জমি সাড়ে পাঁচ শতাংশ বানিয়াড়ী গ্রামের সাহেব আলী ও সাড়ে ৫ শতাংশ ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হাসিবুল ইসলামের নিকট অহম ও তহম বিক্রয় করে দেয়। এর বিরুদ্ধে ফরিদপুর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা চলমান। তবে সে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে জোরপূর্বক পেশী শক্তি খাটিয়ে হাসিবুল ও আলাউদ্দীন মেম্বার তাঁর লোকজন নিয়ে ঢাল সড়কি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মঙ্গলবার সকালে হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘরসহ সকল আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং আমার স্ত্রী মমতাজ বেগমের (৭০) কানের দুলসহ নগদ ৩০ হাজর টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি আরো বলেন, ওই প্রভাবশালীরা আমার ঘর বাড়ি ভাংচুর করবে বলে গুঞ্জন শুনতে পেয়ে আমার আপন ছোট ভাই ফরিদ হোসেন মোল্যা বাদী হয়ে ভাংচুরের আগের দিন সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরেরদিন সকালেই আমার ঘর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিনা প্রশাসনের চেয়েও কি অপরাধিরা শক্তিশালী!
 এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ওই জমিটা আমার দুই চাচার। এ নিয়ে আদালত মামলার রায় অনুযায়ী ঢোলডগর বাজিয়ে লাশ নিশানা গেড়ে দেয়। কিন্তু হাফিজার মোল্যাগং আইন না মেনে জমিটি জবরদখল করে কিছুদিন আগে কয়েকখান ইট দিয়ে ছাপড়া দেয়। চাচার জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। হাফিজার মোল্যা অযথা আমাদের সম্মানহানী করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ প্রথমে বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না বলেন। তবে পরে হাফিজার অন্যের সম্পত্তি দখল করে কয়েকখান টিন ও ইট দিয়ে ছাপড়া তুলে জমি দখল করার কথা বলেন। জমির মূল মালিকরা তাদের জমি দখলমুক্ত করেছে বলে তিনি আরো জানান।
   এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, হাফিজারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা নয়, মূলত সে অন্যের জমি দখল করেছিল। পরে অন্যপক্ষ ঘরের বেড়া সরিয়ে ফেলেছে বলে জানতে পেরেছি। কোন ঘর ভাঙচুর হয়নি। সোমবার রাতে হাফিজারের ভাই ফরিদের লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছিলাম। ভাংচুরের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখে। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ মামলা করতে পারে। তবে এখনও (বিকেল ৫টা) এ ভাঙচুরের ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। 
 গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মধুখালি সার্কেলের এএসপি সুমন কর জানান, সোমবার রাতে হাফিজারের ছোট ভাই ফরিদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। আমি বাইরে থাকায় সকালের ভাংচুরের বিষয়টি জানতে পারিনি। তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলে যাচাই-বাছাই করে মামলা নেওয়া হবে।